Header Ads

Header ADS

নামাজে কোরআন দেখে পড়া যাবে?(দলিলসহ)

ইমাম শাফেঈ রাহিমাহুল্লাহ যখন কুফায় যেতেন, তখন নামাযে রফয়ে ঈদাইন করতেন না৷ কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, ইমাম আবু হানিফার সম্মানার্থে করি না৷
শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী রাহিমাহুল্লাহ “আল ইনসাফ” নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন৷ সেখানে তিনি জোরালোভাবে একটি বিষয়ে আলোচনা করেছন— যে এলাকায় একটি সুন্নাহ প্রচলিত আছে, সে এলাকায় গিয়ে যদি একই বিষয়ে ভিন্ন আরেকটি সুন্নাহ থাকে, সে সুন্নাহর দাওয়াত প্রদান করবে না৷ কারণ, তাতে মানুষের মাঝে ফিতনা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে৷
নফল নামাযে দেখে কোরআন পড়ার বিষয়টি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহার গোলাম জাকওয়ান থেকে বর্ণিত হয়েছে৷ তিনি মুসহাফ দেখে রমযানে পড়িয়েছিলেন৷
হাদিসে নামাযের ব্যাপারে একটি মূলনীতি বর্ণিত হয়েছে৷ আমাদের দেশের মডারেট শায়খরা বলাবলি করেন, পুরুষ এবং মহিলার নামাযে কোনো পার্থক্য নাই৷ দলিল হিসেবে একটি হাদিস পেশ করেন— রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
صلوا كما رئيتموني أصلي
অর্থাৎ তোমরা নামায পড়ো যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখো৷ (বুখারী : হাদিস নং ১০৩৬)
মডারেট শায়খদের জিজ্ঞেস করা দরকার, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো জীবনে হাজার হাজার রাকআত নফল নামায পড়েছেন৷ তিনি কি কখনও কোনো নামাযে কোরআন শরীফ দেখে তেলাওয়াত করেছেন?
তারাবীহ বিশ রাকআত ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুর সুন্নাহ বলে এড়িয়ে যান, অথচ ইবনে তাইমিয়া, ইবনে আবদুল বার মালেকী, ইবনে কুদামা মাকদেসী রাহিমাহুমুল্লাহ এর বক্তব্য অনুযায়ী বিশ রাকআত তারাবীহ সকল সাহাবীর ইজমা দ্বারা প্রমাণিত৷ তারাবীর ক্ষেত্রে সকল সাহাবীর ইজমা বাদ দিয়ে দেন, আবার নিজেদের সুবিধার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের আমল বাদ দিয়ে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহার হাদীসের ওপর আমল করে বলেন, নামাযে কোরআন দেখে পড়া যাবে!
সনদের দিক থেকে দুর্বল হলেও ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বর্ণনা করেন,
: نَہَانَا أمیرُ المُوٴمِنِیْنَ عُمَرُ رضی اللّٰہ عنہ أَن یَوٴُمَّ النَّاسَ فِي الْمُصْحَفِ، وَنَہَانَا أَن یَّوٴُمَّنَا اِلَّا الْمُحْتَلِمُ․
অর্থাৎ আমিরুল মুমিনীন ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু ইমাম সাহেবকে নামাযে কোরআন দেখে পড়তে নিষেধ করেছেন৷ কিতাবুল মুসহাফ, ইমাম আবু দাউদ লিখিত, হাদিস নং ১৮৯)
আচ্ছা, ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুকে শয়তান প্রচণ্ড ভয় করত৷ আপনারাও কেন তাকে এত ভয় পান? বিশ রাকআত তারাবিহ ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুর সুন্নাহ বলে কমিয়ে ফেলেন! আবার ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুর মতের অনুসরণ না করে বলেন, নফল নামাযে কোরআন দেখে পড়া যাবে?
কাতাদা রাহিমাহুল্লাহ বিখ্যাত তাবেঈ সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
إِذَا کَانَ مَعَہُ مَا یَقُوْمُ بِہِ لَیْلَہُ رَدَّدَہُ وَلاَ یَقْرَأُ فِي الْمُصْحَفِ
অর্থাৎ কেউ যদি কিয়ামুল লাইলে পড়ার মতো সামান্য কোরআন মুখস্থ থাকে, তাহলে সেটা বারবার পড়বে৷ তারপরও কোরআন দেখে পড়বে না৷
লাইস রাহিমাহুল্লাহ মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ এর ব্যাপারে বলেন,
أنَّہُ کَانَ یَکْرَہُ أَنْ یَّتَشَبَّہُوْا بِأَہْلِ الْکِتَابِ یَعْنِيْ أَنْ یَّوٴُمَّہُمْ فِي الْمُصْحَفِ
অর্থাৎ আহলে কিতাবদের সাথে সাদৃশ্য রেখে তিনি নামাযে কোরআন দেখে পড়াকে মাকরূহে তাহরীমী বলেছেন৷
আমাশ ইবরাহিম নাখাঈ থেকে বর্ণনা করেন,
کَانُوْا یَکْرَہُوْنَ أَنْ یَّوٴُمَّ الرَّجُلُ فِي الْمُصْحَفِ کَرَاہِیَةً شَدِیْدَةً أَن یَّتَشَبَّہُوْا بِأَہْلِ الْکِتَابِ“
অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম নামাযে কোরআন দেখে পড়াকে মারাত্মক অপছন্দ করতেন আহলে কিতাবদের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কারণে (বক্তব্যগুলো ইমাম আবু দাউদ কিতাবুল মাসাহিফে উল্লেখ করেছেন৷ হাদিস নং ১৮৯, ১৯০, ১৯১)
খতীবে বাগদাদী রাহিমাহুল্লাহ তারিখে বাগদাদ এ আম্মার বিন ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুর আছার উল্লেখ করেছেন৷
: عَنْ عَمَّارِ بْنِ یَاسِرٍ کَانَ یَکْرَہُ أَن یَّوٴُمَّ الرَّجُلُ النَّاسَ بِاللَّیْلِ فِيْ شَہْرِ رَمَضَانَ فِي الْمُصْحَفِ ہُوَ مِنْ فِعْلِ أَہْلِ الْکِتَابِ
অর্থাৎ আহলে কিতাবদের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কারণে রমযানের রাতের নামাযে কোরআন দেখে ইমামতি করাকে তিনি মাকরূহ বলেছেন (তারিখে বাগদাদ : ৮/১২০)
আরও অনেক বক্তব্য নকল করা যাবে৷ বাকি থাকল আয়শা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহার হাদীসের কথা৷ এ হাদীসের ব্যাপারে খোদ মডারেট শায়খদের মান্যবর নাসির উদ্দিন আলবানি রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
وما ذکر عن ذکوان حادثة عین لا عموم لہا
অর্থাৎ জাকওয়াম এর ঘটনা একটি বিশেষ ঘটনা৷ এটা ব্যাপক বিষয় নয়৷ (ফাতহুর রাহমান : ১২৩)
ইমাম কাসানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
وأما حدیث ذکوان فیحتمل أن عائشة ومن کان من أہل الفتوی من الصحابة لم یعلموا بذلک وہذا ہو الظاہر بدلیل أن ہذا الصنیع مکروہ بلا خلاف ولو علموا بذلک لما مکنوہ من عمل المکروہ في جمیع شہر رمضان من غیرحاجة، ویَحْتَمِلُ أن یکون قول الراوي کان یوٴم الناس في شہر رمضان وکان یقرأ من المصحف إخبارا عن حالتین مختلفین أي کان یوٴم الناس في رمضان وکان یقرأ من المصحف في غیر حالة الصلاة
অর্থাৎ সম্ভবত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা সে বিধান জানতেন না৷ জানলে তিনি এমনটা করতেন না৷ অথবা বর্ণাকারীর কথা দ্বারা এটাও উদ্দেশ্য হতে পারে যে, তিনি রমযানের দুটি অবস্থা বর্ণনা করেছেন৷ তিনি রমযানে ইমামতি করতেন এবং নামাযের বাহিরে কোরআন দেখে পড়তেন (বাদায়িউস সানায়ে : ২/১২৩)
ইমাম আইনী রাহিমাহুল্লাহও একই ধরণের বক্তব্য দিয়েছেন৷ তাদের উভয়ের কথা আরেকটি আছার দ্বারা শক্তিশালী হয়৷ হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহিমাহুল্লাহ আয়শা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা থেকে এ সংক্রান্ত একটি আছার নকল করেছেন৷ সেখানে কোরআন দেখে পড়ার কথা নেই৷
عن ابن أبي ملیکة أنہم کانوا یأتون عائشة بأعلی الوادي ہو وعبید بن عمیر والمسور بن مخرمة وناس کثیر فیوٴمہم أبو عمر و مولی عائشة، وأبو عمر وغلامہا حینئذ لم یعتق․
ইবনে আবী মুলাইকা বর্ণনা করেন, তিনি, মিসওয়ার বিন মাখরামা এবং আরও অনেক মানুষ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহার কাছে আসেন৷ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহার গোলাম আবু আমর ইমামতি করেন (আত তালখিসুল হাবির: ,২/১১০)
এ বর্ণনায় কোরআন দেখে পড়ার কথা নেই। এর দ্বারা কাসানী এবং আইনী রাহিমাহুমাল্লাহ’র বক্তব্য শক্তিশালী হয়৷ অর্থাৎ নামাযের বাহিরে তিনি কোরআন দেখে পড়েছেন৷
আলোচনা দীর্ঘ না করে মডারেটদের প্রিয় ব্যক্তি শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানি রাহিমাহুল্লাহ’র বক্তব্য তুলে ধরছি৷ তিনি বলেন,
لا نری ذلک، وما ذکر عن ذکوان حادثة عین لاعموم لہا، وبإباحة ذلک لأئمة المساجد یوٴدي بہم إلی ترک تعاہد القرآن والعنایة بحفظہ غیبا وہذا خلاف قولہ صلی اللہ علیہ وسلم: تعاہدوا القرآن فوالذي نفسي بیدہ لہو أشد تفصیا من الإبل في عقلہا، ومعلوم أن للوسائل حکم الغایات کقولہم مالا یقوم الواجب إلا بہ فہو واجب وما یوٴدي إلی معصیة فہو معصیة
অর্থাৎ আমি এটাকে জায়েজ মনে করি না৷ আর জাকওয়ানের ঘটনা একটি বিশেষ অবস্থার, ব্যাপক বিধান নয়৷ এটাকে জায়েজ বললে মসজিদের ইমামরা কোরআন মুখস্থ করা ধীরে ধীরে বাদ দিতে থাকবে৷ আর এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীসবিরোধী৷ আর শরিয়তে যে কাজ গুনাহের দিকে ধাবিত করে, সেটাও গুনাহ৷ (ফাতহুর রহমান : ১২৫)
মডারেটদের কাজই হলো, কোনো এলাকায় শত বছর থেকে চলে আসা স্বীকৃত আমলের বিপরীত ফতোয়া দিয়ে সাধারণ মানুষকে ফিতনায় পতিত করা৷ কিতাবাদির গলি ঘুপচি খুঁজে বিচ্ছিন্ন বা মারজুহ বক্তব্য উল্লেখ করে ঢেলে দেন ফতোয়া৷ বিভ্রান্ত হয় সাধারণ মানুষ৷ মডারেটরা ইসলামের জন্য ক্ষতিকর৷ তাদের ফতোয়া গ্রহণ করার আগে তাহকিক করবেন৷
লেখক : গবেষক আলেম, তার্কিক ও বহু গ্রহন্থপ্রণেতা

No comments

Powered by Blogger.